বাংলাদেশে শুট করা প্রথম হলিউড চলচ্চিত্র

0
773

আনিফা আরশি:

-সাপ্তাহিক সিনেমার সাতকাহন-

অস্কার বিজয়ী হলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা “Around the World in 80 Days” (1956) চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের শুটিং হয়েছিল বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে, লাউয়াছড়া বনে। প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছিলেন মাইকেল অ্যান্ডারসন ১৯৫৬ সালে চিত্রায়িত অ্যাডভেঞ্চার এই চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের শুটিং হয়েছিল বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে, লাউয়াছড়ায়।

প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছিলেন মাইকেল অ্যান্ডারসন। মূলত ফরাসি লেখক জুল ভার্নের একই নামের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।

১৯৫৫ সালের ৯ আগস্ট সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়ে শেষ হয় একই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এই চলচ্চিত্রটির জন্য প্রায় ১৩টি দেশের ১১৪টি এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল।
চলচ্চিত্রটির গল্পে দেখা যায় এক কাঠখোট্টা ব্রিটিশ ডেভিড নিভেন তার একমাত্র ভৃত্যকে নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে ২০ হাজার পাউন্ডের বাজি ধরে ৮০ দিনে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসেন।

সিনেমার এক পর্যায়ে ট্রেনে করে ভারত ভ্রমণের সময় প্রায় পুরো অংশটুকুই শুটিং করা হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। সিনেমার ধারণকৃত দৃশ্যগুলোর সঙ্গে বর্তমান প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকাংশেই মিলে যাবে।

যদি দেখতে ইচ্ছে করে কেমন ছিল ১৯৫৫ সালের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাদা কালো পর্দায় এক ঝলক দেখে নেওয়া যায় সিনেমাটি।
অবাক করার বিষয় হলো, সেই রেলপথ, বনের ভেতর দু’পাশে সারি সারি গাছের সৌন্দর্য এখনও বর্তমান।ছবিটির দৃশ্যে দেখানো হয় ট্রেন চলছে। হঠাৎ রেললাইনে দেখা যায় একপাল হাতি আপনমনে হাঁটছে। চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। বগি থেকে নেমে দৃশ্যটি দেখতে আসেন নায়ক ডেভিড নিভান। সামনের গ্রামে গিয়ে দেখেন সতীদাহ। নায়ক ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে বাঁচান। মেয়েটি হলো শার্লি ম্যাক্লেইন। ছবির এই অংশটুকুর শুটিং হয়েছিল লাউয়াছড়ার রেললাইন এলাকায়।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুটিং হয়েছিল এই বিখ্যাত সিনেমাটির। তার মধ্যে মৌলভীবাজারের( সিলেটের) শ্রীমঙ্গলে, লাউয়াছড়া উদ্যানের এই অংশটুকু বিশেষভাবে জায়গা করে নেয়। এ ছাড়া সতীদাহ প্রথার মতো একটি সামাজিক কুপ্রথাকেও তুলে আনা হয়েছিল এই দৃশ্যায়নে।চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত শিকারি, ফটোগ্রাফার ও ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র পরিচালক জিএমএম ইহসানুল করিম। সেই সময়ের অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও ইহসানুল করিমের একক প্রচেষ্টায় চলচ্চিত্রটির শুটিং নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হয়েছিল। চলচ্চিত্রটি ১৯৫৬ সালে নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবারের মতো মুক্তি পায়। এ ছাড়া ১৯৬২ সালে ঢাকার গুলিস্তানেও চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছিল।

সম্ভবত বাংলাদেশে শুট করা প্রথম হলিউড চলচ্চিত্র হচ্ছে এটি। আইএমডিবিতে ৬.৮ রেটিং পাওয়া চলচ্চিত্রটি ৮টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি জিতে নেয়।

 

লেখা:জাহিদ হোসেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক,
কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি।

তথ্য সূত্র: ইতিহাস ও মিথলজি