নতুন আলোর অপেক্ষায়, সব স্বপ্ন জয়কে ঘিরে: অপু বিশ্বাস

0
1431

 বিনোদন প্রতিবেদক:

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে স্তব্ধ বিশ্ব জনজীবন। মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। স্বাস্থ্যবিদরা ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। শুটিং বন্ধ। বিপাকে পড়েছেন চলচ্চিত্রকর্মীরাও। এরই মধ্যে অসচ্ছল চলচ্চিত্রকর্মীদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন বিত্তবানদের কেউ কেউ। পিছিয়ে নেই শিল্পীরাও। বেশ কয়েকজন তারকা শিল্পীদের দেখা গেছে সাধারণ মানুষের হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিতে।

করোনা বন্দি চিত্রতারকাদের নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। ‘আলো আসবেই’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সোমবার বিকালে শাপলা মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে। এ চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস জানান, সিরিয়াস কমেডির মাধ্যমে এই স্বল্পদৈর্ঘ্যে করোনাকালীন নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সচেতনতামূলক বার্তাও। স্বল্পদৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্রটি প্রকাশের পরই বেশ দর্শক রেসপন্স লক্ষ করা গেছে।

চলচ্চিত্রের সংকটকাল। ক্রমেই কমে যাচ্ছে সিনেমা হল ও সিনেমার সংখ্যা। যার ফলে এই পেশার সাথে জড়িত মানুষজন দিন দিন বেকার হয়ে যাচ্ছে। বছরে যে কয়টি ছবি নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোতে কাজ করে কোনো রকম দিনযাপন করছেন তাঁরা। তবে দেশের মহা দুর্যোগে বন্ধ হয়ে গেছে সেই ভরসাটুকুও। ফলে গৃহবন্দি হয়ে দিন পার করছেন এ পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলো। নিম্নআয়ের এসব লোকজনের জন্য এরইমধ্যে চলচ্চিত্রের বেশ কয়েক জন শিল্পী সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কাজ করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও। তবে সিনিয়ার শিল্পীদের তুলনায় জুনিয়ার শিল্পীরা এগিয়ে। অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তারা দেশের এই দুর্যোগে নীরব থাকতে দেখা গেছে।

করোনার কারনে যখন পুরো দেশ যখন স্থবির তখন অপু বিশ্বাস কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ কে সহযোগিতা করেছেন। তবে করোনার কারনে বেশ আতঙ্গে আছেন তিনি। বলেন, এই দুর্দিনে আমাদের এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এদের জন্যই আজকের অপু বিশ্বাস হতে পেরেছি। শুধু সিনেমা মুক্তির সময় বললেই হবে না প্লিজ আপনারা হলে এসে ছবি দেখুন। ছবি মুক্তির সময় তাঁরাই কিন্তু ১০০ টাকা খরচ করে ছবি দেখছেন। তাঁরা ১০০ টাকা টিকিট কেটে ছবি দেখছে বলেই ছবিটি সাফলতা পাচ্ছে। এখন তাদেন পকেটে ১০০ টাকা ঢুকছে না। কারণ লক ডাউন। এখনই সুর্বণ সুযোগ যাদের কারনে সাফল্য এসেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। দেশের অবস্থার উন্নতি না হলে আবারো অসচ্ছল মানুষদের সহযোগিতা করার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। তবে তিনি কখনো পরিকল্পনা করে কাজ করেন না। যখন মনে হয় যেটা করা দরকার সেটিই করে থাকেন।

তবে এই করোনায় অপু বিশ্বাস মানবিক হলেও শাকিব খান অমানবিকের পরিচয় দিয়েছেন। দেশের এই দুর্দিনে তার একমাত্র পুত্র জয়ের ভরণপোষণ তো দূরের কথা খবর নেননি। জানতে চায়নি এই মহামারিতে তার সন্তান কেমন আছেন। এমন কি ঈদের দিনও খবর নেয়নি জয়ের। ছেলেকে নিয়েই তার ঈদ কেঁটেছে। ঈদের দিন পছন্দের খাবার নিজ হাতে রান্না করেছেন। কাজের মধ্যে দিয়েই দিনটি অতিবাহিত হয়েছে আলাপকালে এমনটাই জানান অপু বিশ্বাস।

মহামারি করোনার থাবা লেগেছে ঢাকাই চলচ্চিত্রেও। করোনা সংক্রমণের কারণে পিছিয়ে যায় জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস অভিনীত দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’-এর মুক্তি। গত ২০ মার্চ ছবিটি মহাসমারোহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে এরইমধ্যে দেশের সব সিনেমা-হল বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার সংক্রমণ কমলে ছবিটির নতুন তারিখ নির্ধারণ হবে। করোনায় থমকে আছে চারদিক। কেমন কাটছে টালিউড কুইন অপু বিশ্বাসের সময়? জানতে চাইলে সর্বাধিক ব্যবসা সফল ছবির এই নায়িকা বলেন, ঘুম থেকে উঠে নাশতা করি। গৃহস্থালির কাজকর্ম করি। বই পড়ি। সিনেমা দেখি। ঘরের কাজের মধ্যে দিয়ে শারীরিক ব্যায়মও হয়ে যাচ্ছে। ঘরবন্দি হয়ে ছেলেকে নিয়ে অনেক ভালো সময় কাঁটছে। কখনো জয়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময় দেওয়ার সময় পাইনি। এখন যেহেতু সময় পেয়েছি জয়কে নিয়ে বেশ ভালো সময় কাঁটছে। জয় আমাকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি।

করোনার ভাইরাসের কারনে চলচ্চিত্রে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রঙ্গনের জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নিলে আপনারা উপকৃত হবেন? বিশ্বজুড়ে এখন অর্থনৈতিক সমস্যা বিরাজ করছে। অর্থনীতি দেশের জন্য একটি ফ্যাক্ট। সেটি যদি একবার ভেঙে যায় তা কাঁটিয়ে উঠা বেশ কষ্টসাধ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিমান ও সুদক্ষ একজন নেত্রী। চলচ্চিত্রের মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি এ অঙ্গনের মানুষের কথা ভেবে দেখবেন। চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পন। সেই চলচ্চিত্রই যদি না থাকে সমাজের মানুষ শিখবে কি করে? আশা করছি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রর সোনালী দিন ফেরাতে এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন। এবং আমাদের শিল্পীদের মধ্যে একতা বাড়াতে হবে। এই শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে গেলে সামনে ভালো কিছু আশা করা যায়। এদিকে সিনেমা শিল্পের ব্যাপক দূরর্দশা আগে থেকেই। তারপরও করোনা যেনো মরার ওপর খারার ঘা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ দেশের সিনেমা হল। যে সকল সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি হল না খোলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অনলাইনে সিনেমা মুক্তির কথা ভাবছেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাসের মন্তব্য কি? ক্রমেই সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি যখন সিনেমায় আসি তখন সাতশত সিনেমা হল চালু ছিল। দু-হাজার ষোলো সালে সর্বশেষ বড়পর্দা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছি তখনও ৩০০-৩৫০ এর মতো হল চালু ছিল। তখন একটি সূর্যদয়ের চিন্তা ভাবনা সবার মধ্যে ছিল। সেই সংখ্যা কমে ৬০ এর ঘরে এসেছে যা চলচ্চিত্র শিল্পর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। বড়পর্দার মানুষদের বড়পর্দায় মানায়। সেটি ক্ষদ্র হয়ে এলে মানাবে না। এমন সিদ্ধান্তে কি বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। তবে চলচ্চিত্রের কল্যাণে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ বিষয় ভেবে দেখবেন।