কেমন আছে দিলদারের পরিবার? শিল্পী সমিতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মেয়ে জিনিয়া

0
1206

বাংলা চলচ্চিত্রের কমিডি চরিত্রের অন্যতম এক নাম দিলদার। চলচ্চিত্রে শক্তিমান অভিনেতাদের তালিকায় অবশ্যই তার নামটা আগের সারিতেই আসবে। সিনেমা পাড়ায় শোনা যায় হিরোদের সিডিউল মিলাতে হতো আগে অভিনেতা দিলদারের সিডিউল নিয়ে। এমনও দিন গিয়েছে তার জীবনে, এক দিনে ৪/৫ সিনেমার শুটিং করেছেন দৌড়ে বেড়িয়েছেন এক ফ্লোর থেকে আর এক ফ্লোর।
চলচ্চিত্রের পর্দায় দুঃখ ভুলানো মানুষ ছিলেন তিনি। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনা বা ক্লান্তিতে মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে যেতো তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে, পেটে খিল ধরিয়ে।বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী কৌতুক অভিনেতা দিলদার, ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই তারিখে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মা’রা যান অসম্ভব জনপ্রিয় এই মানুষটি। মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পর কেমন আছে এই অভিনেতার পরিবার?দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। পেশায় তিনি দাঁতের ডাক্তার। বিয়ে করেছেন অনেক আগেই। তার ছেলে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ছে আর মেয়ে পড়ছে ক্লাস সেভেনে। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।দিলদার চলচ্চিত্রে কাজ করে টাকা জমিয়ে ডেমরার সারুলিয়ায় ১৯৯৪ সালে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় দিলদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম থাকেন। এছাড়াও তিনি মাঝে মধ্যে বড় মেয়ের কাছে চাঁদপুরে ও ছোট মেয়ের কাছে ঢাকার নিকেতনে থাকেন।

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়ার স্বামী মারা গেছেন। জিনিয়া আগে টেলিকমিনিকেশনে চাকরি করতেন। সেখানে থেকে চলে আসেন ব্রাক ব্যাংকে। পাঁচবছর চাকরির পর সেটিও ছেড়ে দেন। শারীরিক অ’সুস্থতা ও অ’তিরিক্ত কাজের প্রেসারে ওই চাকরিটি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে চাকরির চেষ্টা করছেন তিনি।জিনিয়া বলেন, আমার মা-বাবা দুজনার পৈতিক বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। বাবা প্রথমে থিয়েটারে কাজ করতেন। এরপর চলচ্চিত্রে আসেন। তখন আমরা গুলশান ২ এলাকায় থাকতাম। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন। বাবা প্রচুর টাকা খরচ করতেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তার মন কতো বড় সেটা আমাদের চেয়েও বেশি জানেন চলচ্চিত্রে তার কাছের মানুষেরা।
তার আয় যেমন ছিল, ব্যয়ও করতেন তেমন। তখন আমা’র মা একটা বুদ্ধির কাজ করেছিলেন যার ফল আম’রা এখন ভোগ করছি। বাবা যা আয় করতেন ওখান থেকে টাকা জমিয়ে সারুলিয়া (ডেম’রা) তে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় আমার মা মাঝেমধ্যে থাকেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর এবং ঢাকায় আমাদের দু-বোনের কাছেও থাকেন। আল্লাহর রহমতে আম্মা’র শরীর ভালো আছে।দিলদার চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয় বলে জানান তার কন্যা জিনিয়া। তিনি বলেন, ‘আব্বা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরেও অনেকেই খোঁজ খবর রাখতেন। কিন্তু এখন মিডিয়ার কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই আমাদের। বিশেষ করে কৌতুক অ’ভিনেতা আনিস আঙ্কেল বাবার অনেক কাছের বন্ধু ছিলেন। আমাদের সাথে তার পারিবারিক স’ম্পর্ক ছিল। এছাড়া নায়ক মান্নাও আমাদের টুকটাক খবর নিতেন। এখন কেউ খোঁজ নেয় না। তবে আব্বা বিএনপির জিসাস (জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ)’র সভাপতি ছিলেন। মা’রা যাওয়ার পর প্রথম তিন-চার বছর সংগঠনটি আব্বার মৃ’তুবার্ষিকী পালন করতো। আজকাল আর কেউ মনে রাখে না।
টেলিভিশন বা কোথাও বাবার সিনেমা প্রচার হলে সেগুলো দেখেন না জিনিয়া। বললেন, আব্বাকে টেলিভিশন বা সিনেমার পর্দায় দেখলে নিজে ঠিক থাকতে পারি না। তখন আমি সেখান থেকে সরে যাই। আমার মাথা ধরে আসে। এত আদর তার কাছ থেকে পেয়েছি, তাকে ছাড়া এতগুলো দিন কটলো, পুরো জীবনটাই কেটে যাবে ভাবলেই মন কেঁদে ওঠে।তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন যা কিছু আছে সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। ওনারও বয়স হয়েছে। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাঁকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আর আমা’র তো কোনো ভাই নেই তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়।
বাবার স্মৃ’তি টেনে জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা যখন ‘আবদুল্লাহ’ ছবি করেছিলেন তারপর অ’সুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অনেকদিন তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। আর আমাদের সঙ্গে অনেকসময় দেখা হতো না। কারণ তিনি শুটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আমা’র মডেলিং করার শখ ছিল। কিন্তু আব্বা চাইতেন না আমি মিডিয়ার সঙ্গে যু’ক্ত হই। গিটার বাজানো শিখতে চেয়েছিলাম। আব্বা সেটাও দেননি, কারণ তিনি মনে করতেন লেখাপড়ায় ঘাটতি পড়বে। মিডিয়াতে কাজের নে’শা চেপে বসবে। আমা’র মা’ও খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন আগে, এখনোও করেন। কখনো ঘুরে টাকা পয়সা উড়াননি। কখনো মেকআপ, শপিং বিলাসবহুল জীবন যাপন করেননি। আম’রা কখনো আব্বার শুটিং দেখতে যেতাম না। কারণ আব্বা চাইতেন না সেটা।
জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা মা’রা যাবার পর একটা বিরাট পরিবর্তন টের পেয়েছি চারপাশে। তিনি বেঁচে থাকার সময় চারপাশের মানুষ আমাদের যেমন মূল্যয়ন করতেন এখন সেভাবে করে না। আর আব্বা ছিলেন আমাদের মা’থার ওপর বট গাছ। অনেক ঝড় গেছে আব্বাকে হা’রানোর পর। আম্মা আমাদের দু-বোনকে আগলে রেখেছেন অনেক ক’ষ্টে। আব্বার মৃ’তুবার্ষিকী’তে শিল্পী সমিতি দোয়া-মিলাদের আয়োজন করেছে এবার।শিল্পী সমিতির কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ আগে কেউ এভাবে দোয়া মিলাদের আয়োজনও করেনি।জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা মৃ’ত্যুর আগে নাট’ক লেখা, প্রযোজনা করছিলেন। দুটো নাট’ক প্রচারও হয়েছিল। তারপর চলে যান। আব্বা অনেক রিজার্ভ মাইন্ডের ছিলেন। ঝামেলা কম পছন্দ করতেন, সাহস ছিল কম। আব্বার শেষ ইচ্ছে ছিল তার নাতিপুতিদের মুখ দেখা। আজাদ প্রোডাক্টসের মালিকের সঙ্গে আব্বার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তাদের ছেলের বিয়ে, মেয়ের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত দেয় এখনো। স’ম্পর্কটা বেশ ভালো।
আলাপের শেষের দিকে দিলদার কন্যা জিনিয়া বলেন, আব্বার চলে যাওয়ায় তার অভাব শুধু আম’রা নই, পুরো দেশের চলচ্চিত্র প্রিয় মানুষরা অনুভব করেন। আব্বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তার মূল্যায়ণে তাকে দেশের মানুষ মনে রেখেছে এটাই তার সন্তান হিসেবে আমা’র কাছে শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে হয়।। শুধু আমা’র বাবা নয়, সব শিল্পীদের ক্ষেত্রে এটা হওয়া উচিত।