আমাদের একজন মান্না ছিল !

0
1355

বিনোদন প্রতিবেদক:

কিভাবে ছবি হিট করানো যায় তা মান্নাকে দেখে শেখা উচিৎ। একটা ছবিকে কি করে ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন করানো যায় তার নানা কৌশল জানতেন এই মহানায়ক মান্না।

৯০ দশকে মান্না যখন একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে ঢালিউডে নিজের আসনটি পাকাপুক্ত করেন ঠিক তখনই ৯৭ সালে নাম লেখান প্রযোজকের খাতায়। গড়ে তুলেন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান “কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র”। প্রথম ছবি “লুটতরাজ”। পরিচালনার দায়িত্ব দেন কাজী হায়াৎকে। ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা দিতি ও মৌসুমী।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো…মান্না ঠিক করলেন এই ছবিতে প্লেব্যাক করাবেন ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবির মূল ভোকালিস্ট আইয়ুব বাচ্চুকে! কিন্তু আইয়ুব বাচ্চু তখন কোনোভাবেই সিনেমায় প্লেব্যাক করবেন না নিজের নিজের ইমেজ নষ্ট হবে ভেবে। রাজী করাতে না পেরে সঙ্কায় পড়ে গেলেন ছবির পরিচালক কাজী হায়াৎ ও ছবির সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এবার তাকে রাজী করানোর দায়িত্ব নিলেন মান্না নিজে। অনেক অনুরোধ করে তাকে রাজী করিয়েই ছাড়লেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে “অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে” নামক এই গানে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে কণ্ঠ দেন কনকচাঁপা।ফলাফল ছবি ও গান দুইটাই সুপারহিট। নায়ক+প্রযোজক দুইটাতেই মান্না এইবার সফল।

এলো ২০০২ সাল…মান্না তখন ঢালিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী নায়ক। আবারও প্রযোজনায় আসবেন মান্না। এবার মান্নার কাছে তার ভক্তদের আবদার তখনকার সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেধে ছবি করার। মান্নার ছবিতে সাধারণত নায়িকাদের তেমন কিছু করার থাকেনা ভেবে মান্নার সঙ্গে শাবনূর কোনো ছবিতে অভিনয় করবেনা বলে না করে দেয়। মান্নাও নাছোড়বান্দা…যেমন করেই হোক শাবনূরকে তার সঙ্গে অভিনয় করাতেই হবে। এতে শাবনূর শর্ত দিলেন এই ছবির জন্য তাকে রেকর্ড ১০ লক্ষ টাকা এবং ছবিতে তার গুরুত্ব ৫০ ভাগ অথবা ৪০ ভাগ হলেও দিতে হবে। তাতেই রাজী হলেন মান্না। ছবির নাম “স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ”…পরিচালনায় এফ আই মানিক। এই ছবিতে মান্নার বিপরীতে আরও অভিনয় করেন পূর্ণিমা। ফলাফল–ছবিটি সুপারহিট।

পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৩ সাল। আবারও এফ আই মানিকের পরিচালনায় “দুই বধূ এক স্বামী” ছবি দিয়ে প্রযোজনায় আসবেন তিনি। নায়িকা দরকার দুইটা। মান্না ঠিক করলেন এই ছবির মাধ্যমে ওই সময়ের সবচেয়ে ক্রেজসম্পন্ন দুইজন নায়িকা শাবনূর ও মৌসুমীকে প্রথমবারের মত এক ছবিতে পর্দা ভাগাভাগি করাবেন। যেই ভাবনা সেই কাজ। ছবিটি মুক্তি পেলো…যেই ছবিতে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইজন নায়িকা থাকে সেই ছবি কি হিট না হয়ে থাকতে পারে..! ফলাফল–এই ছবিটিও সুপারিট ব্যবসা করলো।

 

এবার এলো ২০০৭ সাল…প্রযোজক হিসেবে এর মধ্যেই মান্না বেশ কয়েকটি ছবি করে ফেলেন। যার মধ্যে সবগুলো ছবি ছিলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে সফল। মান্না আবারও প্রযোজনায় নামলেন আহমেদ নাসিরের পরিচালনায় “মনের সাথে যুদ্ধ” ছবি দিয়ে। বিপরীতে পূর্ণিমাকে নায়িকা ও সঙ্গে নিয়েছিলেন বাপ্পারাজকে।

মান্নার ইচ্ছা এই ছবিতে প্লেব্যাক করাবেন নগর বাউল জেমসকে। এর আগে বিভিন্ন অ্যালবাম থেকে জেমসের গান কয়েকটি ছবিতে ব্যবহার করা হলেও জেমস কোনো ছবিতে সরাসরি প্লেব্যাক করেননি। রাজীও ছিলেন না। কিন্তু ৯৭ সালে আইয়ুব বাচ্চুর মত জেমসকেও অনেক অনুরোধে রাজী করিয়ে ফেলেন। কবির বকুলের কথা ও ইমন সাহার সুরে “আসবার কালে আসলাম একা” জেমসের গাওয়া এই গানটি হয়ে উঠলো বেশ জনপ্রিয়। ছবিটিও হয়ে গেলো সুপারহিট।

এছাড়াও মাস্টার মেকার পরিচালক মালেক আফসারী কে দিয়ে প্রি-প্রডাকশনে অনেক বেশি সময় নিয়ে তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে বেশ কিছু সিনেমা নির্মান করেন ,শুধু ভালো প্লানিং এর জন্যই বেশির ভাগ সিনেমাই ব্যাবসাসফল হয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম আমি জেল থেকে বলছি, উল্টাপাল্টা৬৯,লাল বাদশা।

এভাবেই মান্না ছবিকে হিট করানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। যার ফলে তিনি নায়ক ও প্রযোজক হিসেবে দুইটাইতেই ছিলেন অনেক সফল একজন তারকা।